বাত (Arthritis) (গ্রীক arthro – ,সন্ধি + –itis, প্রদাহ) হল মূলত অস্থিসন্ধির প্রদাহ যা এক বা একাধিক অস্থি সন্ধিকে আক্রান্ত করে। এটা শিল্পোন্নত দেশে ৫০-৫৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের মানুষের অক্ষমতা মূল কারণ। বাত ব্যথা জনিত অন্যান্য রোগের মধ্যে আথ্রাইটিস উল্লেখ যোগ্য। মানুষের শরীরের জোড়ার অনেকগুলো রোগ বা সমস্যাকে একসাথে আথ্রাইটিস বলা হয়। আর আথ্রাইটিস সম্পর্কে জানার আগে আমাদের মানুষের জয়েন্ট বা অস্থি সন্ধি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে। মানুষের শরীরে বহু জয়েন্ট বা জোড়া রয়েছে এবং এই সব জোড়া তিন প্রকার আর এসব জোড়ায় যদি কোন ভাবে প্রদাহ বা ইনফ্লামেশন হয় তখন আমরা ডাক্তারী ভাষায় আথ্রাইটিস বলে থাকি। আমাদের বাংলাদেশে আথ্রাইটিস আক্রান্ত হলে অনেকে একে বাত রোগ বলে থাকে।
আথ্রাইটিস এক বা একাধিক জোড়ায় ব্যথা হবে। জোড়া ফুলেযেতে পারে, গরম হতে পারে, নড় চড়ায় ব্যথা তীব্র থেকে তীব্রতার হতে পারে, রোগীদের দৈনন্দিন কাজ কর্ম চলাফেরায় অসুবিধা হবে, অনেক সময় জ্বরও আসতে পারে, পাশাপাশি শরীর ক্লান্তবোধ, অবসাদ, হতাশা, অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। এভাবে চলতে থাকলে আস্তে আস্তে রোগী তার দেহের জোড়ার কর্ম ক্ষমতা বা নড়া চড়ার ক্ষমতা হারায় এবং জোড়া সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে রোগী পঙ্গুত্ব বরণ করতে পারে। অনেক সময় দীর্ঘদিন রোগ ভোগে শরীরের মাংস পেশী গুলোও শুকিয়ে যেতে পারে।
আথ্রাইটিস একশত এরও বেশী প্রকার। তার মধ্যে উল্লেখ যেগ্যা হচ্ছে অস্টিও আথ্রাইটিস, রিউমাটয়েড আথ্রাইটিস, এনকালজিং স্পন্ডাইলসিস, গাউট, জুভেনাইল অ্যাথ্রাইটিস যা বাচ্চাদের হয়, সোরিয়াটিক আথ্রাইটিস, রি-একটিভ আথ্রাইটিস, সেপটিক আথ্রাইটিস, স্কে¬রোডারমা, এসএলই, তাছাড়া অন্যান্য রোগের কারণেও আথ্রাইটিস হতে পারে।
আথ্রাইটিস সাধারণত বয়স্কদের বেশি হয়। যে কোন বর্ণের যে কোন বয়সে যে কোন বর্ণের যে কেন বয়সে যে কোন সংস্কৃতির মানুষের আথ্রাইটিস হতে পারে। তবে কিছু হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের আথ্রাইটিস বেশী হয়।
চিকিৎসাঃ আথ্রাইটিস জোড়ার রোগ ও বিভিন্ন প্রকার আথ্রাইটিস রয়েছে। যদি কাহারো এ জাতীয় সমস্যা হয় তা হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। চিকিৎসক এ ক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা করাতে পারেন। যেমন- রক্ত পরীক্ষা, সেরোলজী পরীক্ষা, এক্সরে তা ছাড়া রোগের লক্ষণ দেখেও বুঝা যায় যে কি জাতীয় আথ্রাইটিস হয়েছে। আথ্রাইটিসের প্রকারভেদ কিছু ঔষধ খেয়ে যেতে হয়। যেমন- ব্যথা নাসক এনএসএআইডিএস(NSAIDs), ডিজিজ মডিফাইং ঔষধ(DMARDs), ভিটামিন ডি(Vit-D), ক্যালসিয়াম(Calcium)। আথ্রাইটিসে ফিজিওথেরাপি অত্যন্ত কার্যকরী চিকিৎসা। এতে অনেকাংশে রোগীর সমস্যা ব্যথা বেদনা দুর হয় এবং রোগী স্বাভাবিক চলাফেরা কাজ কর্ম করতে পারে।
চিকিৎসক প্রয়োজন বোধে ইলেকট্রোমেগনেটিক রেডিয়েশনে, আল্ট্রাসাউন্ড থেরাপি, ইন্টারফেরেন সিয়াল থেরাপি। বিভিন্ন নিয়ম মাফিক কৌশলগত ব্যায়াম, মেনুয়াল থেরাপি প্রয়োগের মাধ্যমে রোগীর সমস্যা বহুলাংশে লাঘব হয় ও অস্থি সন্ধি স্বাভাবিক তার কর্মক্ষমতা ফিরে পায়, ফলে রোগী আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। তবে তার জন্য অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে। অনেক সময় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার পাশাপাশি বিভিন্ন অর্থোসিস এর প্রয়োজন হতে পারে। ঠান্ডায় আথ্রাইটিসের ব্যথা ও সমস্যা বেড়ে যায়, তাই ঠান্ডা থেকে দূরে থাকতে হবে। কুসুম গরম পানির সেক ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী চিকিৎসা, কুসুম গরম পানিতে গোসল করা যেতে পারে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের নির্দেশমত ব্যায়াম নিয়মিত করতে হবে। নিয়মিত হাটা চলাফেরা করতে হবে অত্যাধিক পরিশ্রম করা যাবে না। শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রনে রাখতে হবে, ওজন বেড়ে গেলে ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে, খাদ্য তালিকায় চর্বি ও আমিষ চাতীয় খাবার পরিমানে কমাতে হবে, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি আথ্রাইটিস রোধে ভাল ভূমিকা পালন করে তাই ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি ঔষধের দোকান থেকেও কিনে খাওয়া যেতে পারে। দুধ, ডিম, মাছের কাটা, হাড়গোড়, বিভিন্ন ফলমূল ও শাকসব্জিতে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম রয়েছে তা খেতে হবে। নীচু জিনিস যেমন পিড়ি বা ফ্লোরে অকেনক্ষ বসে থাকা যাবে না, অত্যাধিক ভারি বোঝা বহন করা যাবে না, ফোম বা জাজিমের বিছানায় শোয়া যাবেনা, অনেকক্ষন একজায়গায় বসে বা দাড়িয়ে থাকা যাবেনা, মদ্যপান, ধূমপান বা তামাক জাতীয় দ্রব্য গ্রহণ করা যাবে না।
ড. মোঃ সফিউল্যাহ্ প্রধান
পেইন প্যারালাইসিস ও রিহেব-ফিজিও বিশেষজ্ঞ
যোগাযোগঃ-ডিপিআরসি হাসপাতাল( ২৯ প্রবাল হাউজিং,রিং-রোড,শ্যামলী,ঢাকা-১২০৭)
সিরিয়ালের জন্য ফোনঃ- +8801997702001; +8801997702002
www.dprcbd.com
www.bdtodays.com