আজ ২৯ অক্টোবর, ২০২১ “বিশ্ব স্ট্রোক দিবস”
এবারের প্রতিপাদ্য বিষয়ঃ ‘প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান’।
বিশ্ব স্ট্রোক দিবস প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর উদযাপিত হয়। মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে স্ট্রোক সংঘটিত হয়। বিশেষ করে রক্তনালী বন্ধ হয়ে কিংবা রক্তনালী ছিঁড়ে মস্তিষ্কে এই রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। রক্তে থাকে অক্সিজেন আর পুষ্টিগুণ। ফলে অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের টিস্যুগুলো মারা যায়। স্ট্রোকের সবচেয়ে বড় কারণ হলো উচ্চরক্তচাপ। সারাবিশ্বে মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক।
পটভূমি
বিশ্বে প্রতি ৬ সেকেন্ডে একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। বছরে আক্রান্ত হচ্ছে ৬ কোটি এবং মারা যাচ্ছে ২ কোটি মানুষ। স্ট্রোকের কারণে দেড় কোটি লোক পঙ্গু হচ্ছে। প্রতি ৬ জনে ১ জনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি থাকে। স্ট্রোকে আক্রান্তদের মধ্যে ৪০ ভাগ মারা যায়, আর ৩০ ভাগ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারা বেঁচে থেকেও দুর্বিষহ জীবনযাপন করেন। স্ট্রোকে আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলছে। অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে।স্ট্রোক সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিবছর ২৯ অক্টোবর বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উদযাপিত হয়।
স্ট্রোকের লক্ষণ সমুহ:-
জীবন ও জীবিকার প্রতিযোগিতার কারণে গ্রামের চেয়ে শহুরে জীবন বেশি কর্মব্যস্ত ও একঘেয়ে। তার ওপর যদি পারিবারিক জীবন হয় সমস্যাবহুল, তাহলে অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রোক করার আশঙ্কা থেকে যায়। স্ট্রোক আসে স্ট্রেস(stress) বা মানসিক চাপ থেকে।
এমন নানাবিধ মানসিক চাপে যখন স্ট্রোক করে, তার আগে কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান হয়। এই লক্ষণগুলো জানা থাকলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায়।
মূলত স্ট্রোক দুই প্রকার:
Ischemic and Hemorrhagic. এদের মধ্যে Ischemic stroke প্রায়ই দেখা যায়। কিন্তু Hemorrhagic stroke খুব কম দেখা যায়। মস্তিষ্কের ধমনিতে যাখন রক্ত সঞ্চালন বাধা প্রাপ্ত হয় বা ধমনিতে রক্ত জমাট বদ্ধ হয়ে রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়, তখন এই Ischemic stroke করে। ঘাড়ের Carotid Artery তে রক্ত সঞ্চালন বা প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় তখনো স্ট্রোক করে।
Hemorrhagic stroke খুব বেশি দেখা যায় না। মস্তিষ্কের ধমনি যখন কোনো কারণে ছিঁড়ে যায় এবং মাথার খুলির চামড়ার নিচে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে তখন Hemorrhagic stroke করে।
স্ট্রোকের সাধারণ লক্ষণ হলো:
০১. হঠাৎ অতিরিক্ত মাথা ব্যাথা
০২. হঠাৎ মুখ, হাত ও পা অবশ হয়ে যাওয়া (সাধারণত শরীরের যে কোন এক পাশ)। অনেক সময় মুখের মাংস পেশি অবশ হয়ে যায়, ফলে লালা ঝড়তে থাকে।
০৩. হঠাৎ কথা বলতে এবং বুঝতে সমস্যা হওয়া।
০৪. হঠাৎ এক চোখে অথবা দুই চোখে দেখতে সমস্যা হওয়া।
০৫. হঠাৎ ব্যালেন্স বা সোজা হয়ে বসা ও দাড়াতে সমস্যা হওয়া, মাথা ঘুরানো এবং হাটতে সমস্যা হওয়া।
স্ট্রোক পরবর্তী সমস্যাঃ
শরীরের এক পাশ অথবা অনেক সময় দুই পাশ অবশ হয়ে যায়, মাংসপেশীর টান প্রাথমিক পর্যায়ে কমে যায় এবং পরে আস্তে আস্তে টান বাড়তে থাকে, হাত ও পায়ে ব্যথা থাকতে পারে, হাত ও পায়ের নড়াচড়া সম্পূর্ন অথবা আংশিকভাবে কমে যেতে পারে, মাংসপেশী শুকিয়ে অথবা শক্ত হয়ে যেতে পারে, হাটাচলা, উঠাবসা, বিছানায় নড়াচড়া ইত্যাদি কমে যেতে পারে, নড়াচড়া কমে যায় যার ফলে চাপজনিত ঘা দেখা দিতে পারে, শোল্ডার বা ঘাড়ের জয়েন্ট সরে যেতে পারে ইত্যাদি।
এমন অবস্থায় অবিলম্বে নিকটস্থ কোনো ক্লিনিক বা হাসপাতালে স্থানান্তর জরুরি। অন্যথায় জীবন সঙ্কটাপন্ন হতে পারে।